গল্প -রীতাকে ভালোবাসা যায়, ভুলে থাকা যায় না...Bangla Romantic Love story


গল্প -রীতাকে ভালোবাসা যায়, ভুলে থাকা যায় না...
লেখক-লাভলী ইয়াসমীন: গজফোর্ড, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
রীতাকে দেখি না আজ প্রায় আট বছর হলো। আমার জীবনের একটা বড় অধ্যায় জুড়ে আছে রীতা—ইসরাত জাহান রীতা। রোকেয়া হলে একই রুমে থেকেছি শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত। কী জানি কী এক অদৃশ্য কারণে রীতা আমাকে বিনা নোটিসে বয়কট করেছে। অথচ এমন একটা সময় ছিল আমরা রোকেয়া হলের মাঠের ছোট্ট কাঠগোলাপ গাছের দুই ডালে দুজন মুখোমুখি বসে গল্প করে কাটিয়ে দিয়েছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কাঠগোলাপ গাছটা এখনো আছে কিনা আমি জানি না। থাকলেও সে গাছে বসে কেউ আমার আর রীতার মতো জীবনের স্বপ্ন ছবি আঁকে কিনা আমি সেটাও জানি না। শুধু জানি সেদিনের সেই কাঠগোলাপ গাছটা যদি আজ জানত রীতা আমাকে ভুলে গেছে, তাহলে হয়তো আর কোনো দিন তার ডালে কাউকে বসতে দিত না। কেউ না জানুক, আমি আর রীতা তো জানি, আমাদের কত নির্ঘুম রাতের সুখ-দুঃখের সাক্ষী ছিল সেই গাছ। শুধু কী গাছ, বিশালাকার সবুজ ঘাসের মাঠ, বেগম রোকেয়ার মূর্তির পাদদেশ, হলের ভেতরের শহীদ মিনারের সামনে, ফয়জুন্নেসা হলের নিচের রাস্তায় বসেও কাটিয়ে দিয়েছি কতশত অলস বিকেল, মন খারাপের সন্ধ্যা। এমনকি জ্যোৎস্না বিলাশের মায়াবী মধ্যরাত।
মনে আছে, একবার টিএসসিতে তারা শংকরের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ দেখতে গিয়েছিলাম দুজন। ছবি শেষ হতেই আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম গাল ভেজা। দেখি নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। রীতার দিকে তাকাতেই দেখলাম ওরও চোখ ছলছল করছে। সেদিন একটিবারের জন্যও মনে হয়নি একদিন আমরাও একে অপরের কাছে মেঘে ঢাকা তারা হয়ে যাব। রীতা, তোমার কি মনে আছে আমাদের সেই সব ফেলে আসা দিনগুলোর কথা! আমার কিন্তু সব মনে আছে।
চুপচাপ শান্ত স্বভাবের রীতা যখন আমার ইচ্ছাকে দাম দিয়ে আমার সব অদ্ভুত আবদার পূরণ করার তাগিদে ঘণ্টা মিটিয়ে রিকশায় ঘুরত অথবা নান্না মিয়ার বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য আমারই হাত ধরে পুরোনো ঢাকায় ছুটত, তখন সত্যি নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ বলে মনে হতো। সেদিনের অনেক ছোট ছোট টুকরো ঘটনা আজ আমাদের জীবনে ইতিহাস হয়ে আছে। রীতার মনে আছে কিনা জানি না, আমাদের দুজনের প্রথম রাফিন প্লাজার ত্রয়ী পারলারে চুল কাটাতে যাওয়ার কথাটা। সবে আমরা মফস্বল থেকে এসেছি। হেয়ার কাট সম্পর্কে ধারণাও তেমন নেই। তো রীতার চুলের আগা কাটাতে গিয়ে আমি পারলারের মেয়েটিকে স্ট্রেট কাট না বলে ভুল করে বলে ফেলেছিলাম স্টেপ কাট দিতে। আমার চোখের সামনে যখন মেয়েটি রীতার চুল ছোট করতে করতে ওপরের দিকে তুলছিল, আমি মেয়েটিকে হঠাৎ থামিয়ে দিয়ে বললাম, আপনি এটা কি করছেন? তখন তিনি বললেন, কেন স্টেপ কাট দিচ্ছি তো। ততক্ষণে যা হওয়ার তা গেছে।
হলে ফিরে রীতা একটা কথাও ওই দিন বলেনি। পরের দিন সন্ধ্যায় কাঁচি নিয়ে আরজুকে দিয়ে আমার কোমর ছোঁয়া চুল কেটে ঘাড় সমান করে এলাম। মনে মনে ভাবলাম রীতার অমন সুন্দর চুলের কাছে আমার এমন পচা চুল বিসর্জন, এ আর এমনকি। রীতার কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে। ওর সামনে বড় চুল নিয়ে ঘুরতে আমারও কেমন অস্বস্তি হচ্ছিল। আট বছরে রীতাকে ওই এক দিনই কাঁদতে দেখেছিলাম। যখন ও দেখল আমি চুল কেটে ফেলেছি। তারপর আর রীতাকে কোনো দিন কাঁদতে দিইনি। আনন্দ দিয়েছি অনেক। পয়লা বৈশাখ, সরস্বতী পূজা, ষোলোই ডিসেম্বর যখনই শাড়ি পরেছি, রীতাকেও পরিয়েছি। হাতে হাত ধরে ঘুরেছি ক্যাম্পাসের এ মাথা থেকে ও মাথা।
২০০২ থেকে ২০০৮, হল লাইফের পুরো সময়টা এক পাতিলে রান্না করে খেয়েছি। রীতা খাবারের একটা সম্ভাব্য মাসিক খরচসহ মেন্যু লিস্ট করেছিল শনি থেকে শুক্র কোন দিন কী খাব। আজও কাগজটা খুব যত্ন করে তুলে রেখেছি আমার ডায়েরির ভাঁজে। রীতাও হয়তো আমার মতো মনের ভাঁজে আমাদের ভালোবাসাটা তুলে রেখেছে পাছে প্রকাশ পায় এই ভয়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দিনটাতেও একই সঙ্গে রোকেয়া হল ছেড়ে উঠেছিলাম মিরপুরের বাসায়। সেখানেও ছিলাম একসঙ্গে প্রায় দুইটা বছর। তারপর কেটে গেছে অদেখা আটটা বছর। এতগুলো দিন দূরে থেকে আমার এটাই উপলব্ধি হয়েছে, রীতাকে ভালোবাসা যায়, ভুলে থাকা যায় না। রীতার ওপর অভিমান করা যায়, রাগ করা যায় না। আমার ধারণা রীতা নিজেও আমাকে নিয়ে এসবই ভাবে, কিন্তু আপন জীবনে অযাচিত কোনো কষ্ট পেয়ে আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে কষ্ট ভাগের ভয়ে। রীতা হয়তো জানে না যাকে ভালোবাসা যায় তার কষ্ট ভাগ করে নিতে পারলে সুখ না পেলেও অন্তত স্বস্তি পাওয়া যায়।
আমার কত খবর রীতাকে দেওয়ার আছে সেটা যদি রীতা জানত। তবে বলি, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল কলেজের চাকরিটা শেষ পর্যন্ত আমি ধরে রাখতে পারিনি রীতা। দেশ ছেড়ে এখন আছি অস্ট্রেলিয়ায় তোমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আমার একটা পুতুলের মতো মেয়ে হয়েছে রীতা। ঠিক আমার মতোই বাচাল। কতবার যে তুমি আমায় বলেছ—‘এবার তোমার বকাটা থামাও, একটু ক্ষান্ত দাও।’ তাজরীর বকবকানি শুনে তোমাকে জ্বালানোর কথা খুব মনে পড়ে যায় জানো? আমি কিন্তু আগের থেকে অনেক মুটিয়ে গেছি। আমাকে দেখলে রীতা হয়তো আজ চিনতেই পারবে না। খুব জানতে ইচ্ছা করে, দেখতে ইচ্ছা করে, চল্লিশ কেজি ওজনের শুকনো রীতা এখন দেখতে কেমন হয়েছে।
মিরপুরের বাসায় থাকতেই রীতা চাকরি নিয়ে চলে যায় নিজ জেলায়। দূর থেকে চোখ বন্ধ করে দেখতে পাই, এই মুহূর্তে চুয়াডাঙ্গায় পূবালী ব্যাংকের কোনো এক শাখায় বসে আপন মনে কাজ করছে রীতা। কাজ করার অবসরে যদি কখনো ভুল করেও লাভলী নামের কারও কথা তোমার মনে পড়ে, তবে অনুরোধ থাকবে, রীতা দয়া করে গোপনে মুখ লুকিয়ে দুই চোখের দুফোঁটা জল তুমি ফেলো না। বরং তুলে রেখ যত্ন করে যদি কোনো দিন দেখা হয় সেদিনের জন্য।
............. সমাপ্ত...........
দেউলিয়া   Sex Worker 

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

হ্যালো......এটা কি দীপার নাম্বার

→ বন্ধুত্ব থেকে জীবনসঙ্গী।। অনেক সুন্দর একটি প্রেম কাহিনী

গল্প- নিরন্তর ভালোবাসা